ট্রাম্পের শুল্ক চাপে, বেকায়দায় ভারতের টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক শিল্প। কৃষির পর দেশটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিতকারী খাতটি পাচ্ছে না বড় কোনো অর্ডার। এতে চাকরি হারানোর শঙ্কায় এ পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকেরা। অনেকেই খাতটিকে বাঁচাতে চাচ্ছেন কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তা। যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প মার্কেট খুঁজতেও জোর দিচ্ছেন অনেকে।
ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সরাসরি প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ভারতের রপ্তানিমুখী খাতগুলোতে। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী একটি উল্লেখযোগ্য শিল্প হলো টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক। তবে গেল আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের জেরে, বেকায়দায় পড়েছে দেশটির বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিতকারী খাতটি।
আসছে না কোনো নতুন ক্রয়াদেশ। তাই চিন্তার ভাঁজ মালিক পক্ষ ও শ্রমিকদের কপালে। ভারতে প্রায় ৫০ হাজার উদ্যোক্তা জড়িত রপ্তানিমুখী টেক্সটাইল খাতের সঙ্গে। দেশটির মোট রপ্তানির ১২ শতাংশ আসে টেক্সটাইল খাত থেকে।
পাশাপাশি কৃষির পর সবচেয়ে বেশি মানুষ শ্রম দেয় খাতটিতে। দেশটির সাড়ে ৪ কোটির বেশি মানুষের রুটি-রুজির যোগান দেয় খাতটি। যাদের বেশিরভাগই নারী। নতুন করে অর্ডার না আসায়, অনেকেই রয়েছেন কর্মসংস্থান হারানোর শঙ্কায়।
এক অধিবাসী বলেন, ‘প্রায় ২০ বছর ধরে কাজ করে আসছি। এখন হঠাৎ করে কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে পরিবার নিয়ে পথে বসে যাবো। এই বয়সে কী করবো? পরিবার নিয়ে কী করব? তা নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি।’
আরেক অধিবাসী বলেন, ‘ভারতের টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক শিল্পের অন্যতম ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মোট পোশাকের ৬ শতাংশ সরবরাহ করেছিলো ভারত। যার আর্থিক মূল্য ছিল চার দশমিক আট বিলিয়ন মার্কিন ডলার।’
ভারতের টেক্সটাইল শিল্পের জন্য বিখ্যাত শহরগুলো হলো পাঞ্জাবের লুধিয়ানা, সুরাত, থিরুপুর ও পানিপাত। এর মধ্যে পানিপাত বিখ্যাত কম্বল ও কার্পেট উৎপাদনের জন্য। শহরটির প্রায় দুই দশমিক দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক বাড়ানোয়, দেশটির বিকল্প রপ্তানি বাজার খুঁজছে পানিপাতের শিল্প উদ্যোক্তারা।
একই অবস্থা থিরুপুরেও। ভারতের মোট নিটওয়্যার রপ্তানির ৬৮ শতাংশ রপ্তানি করে তামিলনাড়ুর এই শহরটি। কিন্তু ট্রাম্পের শুল্ক চাপে নতুন কোনো বড় অর্ডার পাচ্ছে না শহরটির নিটওয়্যার খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা। এরইমধ্যে খাতটিকে বাঁচাতে কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তা চেয়েছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিন।
তবে এতো প্রতিকূলতার মধ্যেও ভারতের টেক্সটাইল ও পোশাক খাতকে বাঁচানো সম্ভব বলে মনে করেন অনেক উদ্যোক্তা। জানান, সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করলে সম্ভব যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প মার্কেটে পণ্য রপ্তানির।
আরেক অধিবাসী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মুখ ফিরিয়ে নেয়া আমাদের জন্য বড় সমস্যা। দেশটির মোট জনসংখ্যা ৩৪০ মিলিয়ন। তবে এর বাইরেও বিশ্বে অনেক মানুষ রয়েছে। যেহেতু আমরা বিশ্বব্যাপী ব্যবসায় করি, তাই যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিলেও আমাদের বড় সংখ্যক ক্রেতা রয়েছে।’
তবে ভারতের এই শ্রমঘন খাতটি বাঁচাতে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার কী উদ্যোগ গ্রহণ করে তার দিকে তাকিয়ে এই খাত সংশ্লিষ্ট সবাই।