এদিকে গত ১০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস এক ভোক্তা সতর্কবার্তা জারি করে নিউইয়র্কের বাসিন্দাদের “ফ্যান্টম হ্যাকার” নামে পরিচিত এক জটিল প্রতারণা সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। ২০২৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে এই হ্যাকাররা। প্রতারণাটি মূলত অবসরোন্মুখ বা অবসরপ্রাপ্তবয়স্ক নিউইয়র্কবাসীদের টার্গেট করা হয়, যেখানে তিন ধাপের কৌশলের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের ব্যাংক ও অবসরকালীন হিসাবের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়া হয়।
লেটিশিয়া জেমস বলেন, ‘এটি এক নিষ্ঠুর প্রতারণা, যেখানে প্রতারকরা মানুষের আজীবনের কষ্টার্জিত অবসর সঞ্চয় লুটে নিচ্ছে, যেগুলোর উপর তারা দৈনন্দিন খরচ চালানোর জন্য নির্ভর করে।’
তিনি বলেন, ‘আমি সকল নিউ ইয়র্কবাসীকে সতর্ক থাকতে অনুরোধ করছি। এই তিন ধাপের প্রতারণা এতটাই পরিকল্পিত যে এটি বৈধ বলে মনে হয়। প্রবীণদের উচিত অবসরের দিনগুলো নিশ্চিন্তে কাটানো, আজীবনের পরিশ্রমের টাকায়। যদি আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ এই প্রতারণার শিকার হন, তবে দয়া করে আমার অফিসে যোগাযোগ করুন।’
জানা গেছে, প্রতারকরা ফোন কল, টেক্সট, ইমেইল বা পপ-আপ মেসেজ পাঠিয়ে দাবি করে যে ভুক্তভোগীর অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে। এরপর একটি ‘কাস্টমার সাপোর্ট’ নাম্বারে কল করার নির্দেশ দেয়। কল করার পর ভুক্তভোগীকে একটি সফটওয়্যার ডাউনলোড করতে বলা হয়, যা প্রতারকদের ভুক্তভোগীর কম্পিউটারে দূরবর্তী প্রবেশাধিকার দেয়। ‘অবৈধ লেনদেন খুঁজে বের করার’ অজুহাতে প্রতারকরা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করে দেখে কোন অ্যাকাউন্টে বেশি অর্থ আছে।
জানা গেছে, পরবর্তীতে আরেকজন প্রতারক ব্যাংকের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে যোগাযোগ করে এবং জানায় যে ভুক্তভোগীর অ্যাকাউন্ট বিদেশি হ্যাকারদের হাতে পড়েছে। এরপর চাপ প্রয়োগ করে বলা হয় যে অর্থ ‘নিরাপদ অ্যাকাউন্টে’ স্থানান্তর করতে হবেথযেমন ফেডারেল রিজার্ভ বা অন্য কোনো সরকারি সংস্থার নামে ভুয়া অ্যাকাউন্ট। ভুক্তভোগীকে ওয়্যার ট্রান্সফার, নগদ অর্থ বা ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে টাকা পাঠাতে বলা হয়, কখনো একাধিক লেনদেনে। ভুক্তভোগীকে জোর করে বলা হয়, এই অর্থ স্থানান্তরের কারণ কাউকে জানানো যাবে না। প্রতারণাকে আরও বৈধ মনে করাতে, তৃতীয় একজন প্রতারক নিজেকে সরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দেয়। যদি ভুক্তভোগী সন্দেহ প্রকাশ করেন, তবে ভুয়া সরকারি লেটারহেডে ইমেইল বা চিঠি পাঠানো হয় যেন এটি আসল মনে হয়। অ্যাটর্নি জেনারেল জেমস নিউইয়র্কবাসীদের বিশেষ করে প্রবীণদের সতর্ক থাকতে এবং নিম্নলিখিত পরামর্শ মেনে চলতে আহ্বান জানিয়েছেন।
পরামর্শে বলা হয়েছে- অচেনা ইমেইল বা টেক্সটে পাঠানো লিংক বা নাম্বারে কখনো ক্লিক বা কল করবেন না।
অপরিচিত কাউকে আপনার কম্পিউটারে দূরবর্তী প্রবেশাধিকার দেবেন না। ফোনে বলা হলে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ স্থানান্তর করবেন না। কেউ যদি ব্যাংক সংক্রান্ত সমস্যা বলেই যোগাযোগ করে, ফোন কেটে দিন এবং সরাসরি আপনার ব্যাংকের অফিসিয়াল নাম্বারে কল করুন। হঠাৎ চাপের মধ্যে আর্থিক সিদ্ধান্ত না নিয়ে পরিবার বা বিশ্বস্ত কারো সঙ্গে পরামর্শ করুন।
‘এই প্রতারণা ভয়, গোপনীয়তা আর তাড়াহুড়োর সুযোগ নেয়,’ যোগ করেন লেটিশিয়া জেমস। তিনি বলেন, ‘সর্বোত্তম প্রতিরক্ষা হলো ফোন কেটে দেয়া এবং বিশ্বস্ত কারো সঙ্গে পরামর্শ করা।’