যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এবার আরও শক্তিশালী নজরদারি প্রযুক্তি কিনতে যাচ্ছে— যা একসঙ্গে কোটি কোটি স্মার্টফোনের অবস্থান ও চলাচলের তথ্য বিশ্লেষণ করতে পারবে।এই উদ্যোগকে ‘গুরুতর গোপনীয়তা-হুমকি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন নাগরিক অধিকারকর্মীরা।
ওয়াশিংটনভিত্তিক সংবিধান অধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা প্রজেক্ট অন গভর্নমেন্ট ওভারসাইট–এর নীতিবিষয়ক পরামর্শক ডন বেল বলেন, এই নজরদারি সম্ভবত অসাংবিধানিক। আইন অনুসারে কারও ফোন বা অবস্থান–তথ্য নিতে হলে আদালতের অনুমতি (ওয়ারেন্ট) দরকার। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নতির ফাঁক গলেই এখন সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরাসরি তথ্য কিনে নিতে পারছে— যা গোপনীয়তার মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন। আইস–এর প্রস্তাবিত চুক্তিতে দেখা গেছে, তারা পেনলিংক নামের এক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ‘অল–ইন–ওয়ান’ নজরদারি সেবা কিনতে চায়। এই প্রযুক্তি প্রতিদিন শত কোটি লোকেশন সিগন্যাল প্রক্রিয়া ও বিশ্লেষণ করতে সক্ষম। এছাড়াও চুক্তিতে ‘ফেস ডিটেকশন’, ‘অ্যাডভান্সড ফেস সার্চ’ এবং ‘ডার্ক ওয়েব ডাটা ফিড’–এর মতো সেবা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগে বাইডেন প্রশাসন ২০২৪ সালে এই ধরনের লোকেশন ডাটা কেনা বন্ধ করে দেয়।
সিনেটর রন উইডেন ‘দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট’কে বলেন, বাইডেন প্রশাসনের সময় হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ এমন ডাটা ক্রয় করে আইন ভেঙেছিল— এ নিয়ে ইন্সপেক্টর জেনারেল প্রতিবেদনও দিয়েছিলেন। এখন ট্রাম্প প্রশাসন আবারও ওয়ারেন্ট ছাড়াই লোকেশন ডাটা কেনার পথে হাঁটছে, যা প্রতিটি আমেরিকানের উদ্বেগের কারণ।
‘ফোর্বস’–এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইস যেসব টুল কিনতে চায়, তার মধ্যে একটি ট্যাঙ্গলস— যা ইতিহাসভিত্তিক মোবাইল, ইন্টারনেট, ফাইন্যান্স, ওয়েব ও লোকেশন ডেটা একত্র করে বিশ্লেষণ করতে পারে।
এই সফটওয়্যারটি প্রথমে তৈরি করেছিল কবওয়েবস, ইসরায়েলের প্রাক্তন সাইবার গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের একটি দল। ২০২১ সালে ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে কর্মী, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকদের ওপর নজরদারির অভিযোগে মেটা তাদের নিষিদ্ধ করে। পরে ২০২৩ সালে কবওয়েবস–এর সঙ্গে পেনলিঙ্ক–এর একীভূতকরণ ঘটে।
আরেকটি টুল হলো ভেনটেল। এর বিরুদ্ধে ২০২৪ সালে ফেডারেল ট্রেড কমিশন অভিযোগ আনে যে তারা অবৈধভাবে সংবেদনশীল লোকেশন ডাটা বিক্রি করেছিল— বিশেষ করে মানুষের হাসপাতাল ও উপাসনালয়ে যাতায়াত–সংক্রান্ত তথ্য।
২০২৩ সালে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইন্সপেক্টর জেনারেলের প্রতিবেদনে বলা হয়, আইস, সিবিপি এবং ডিএইচএস–এর মতো সংস্থাগুলো গোপনীয়তা নীতি ও ফেডারেল আইন ভঙ্গ করেছিল।
এর পরপরই কংগ্রেস ‘ফোর্থ অ্যামেন্ডমেন্ট ইজ নট ফর সেল অ্যাক্ট’ পাস করে, যাতে ওয়ারেন্ট ছাড়া বাণিজ্যিক ডেটা কেনা নিষিদ্ধ করা হয়।
কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতায় ফিরে আসার পর বৃহত্তর নজরদারি ও বহিষ্কার অভিযানের অংশ হিসেবে এই নীতিমালা কার্যত উল্টে দিয়েছে।
একই ধারাবাহিকতায় আইস পুনরায় প্যারাগন সল্যুশনস (ইউএস)–এর সঙ্গে ২০ লাখ ডলারের চুক্তি করেছে— যাদের তৈরি গ্রাফাইট সফটওয়্যার ‘জিরো-ক্লিক’ প্রযুক্তিতে টার্গেট ফোনে অনুপ্রবেশ করে এনক্রিপ্টেড অ্যাপ থেকেও তথ্য বের করতে পারে।
এই স্পাইওয়্যারটি ২০২৩ সালে বাইডেন প্রশাসনের নির্দেশে স্থগিত হয়েছিল।
ডন বেল সতর্ক করে বলেন, আইস এখন যেন সবকিছু সংগ্রহ করতে চায়, এমনকি মার্কিন নাগরিকদের তথ্যও। এআই প্রযুক্তি, বিশাল ডেটা অ্যাকসেস ও ট্রাম্প প্রশাসনের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি একসঙ্গে মিলে যে ভয়াবহ নজরদারি রাষ্ট্র তৈরি করছে, তা সত্যিই উদ্বেগজনক।