মুসলমান সম্প্রদায়ের ভোট টানতে মসজিদে যাচ্ছেন নিউইয়র্ক সিটি নির্বাচনে দুই মেয়র প্রার্থী অ্যান্ড্রু ক্যুমো ও জোহরান মামদানি। তারা মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও ভোট প্রার্থনা করছেন। এখানে উল্লেখ্য, দুই প্রার্থী ডেমোক্র্যাট দলের। তবে প্রাইমারিতে ক্যুমোকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে ডেমোক্র্যাট দলের টিকেট পেয়েছেন তরুণ সোশ্যালিস্ট জোহরান মামদানি।
জ্যাকসন হাইটস মসজিদে ক্যুমো : ৩ অক্টোবর শুক্রবার জুমার নামাজের প্রাক্কালে জ্যাকসন হাইটসের ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’ এলাকায় অবস্থিত দারুল হিদাইয়া মসজিদে যান অ্যান্ড্রু ক্যুমো। তাকে বরণ করেন ইমাম মুফতি সামাদ। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ডেমোক্রেটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার ড. দিলীপ নাথ, কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার ফাহাদ সোলায়মান এবং বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি এম আজিজ।
অতীত ভূমিকা উল্লেখ করে ক্যুমো বলেন, একজন ক্যাথলিক খ্রিস্টান হলেও ২০১১ সালে গ্রাউন্ড জিরোর সন্নিকটে পার্ক ৫১ মসজিদ নির্মাণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি। সেই সময় হিজাব পড়ার কারণে হামলার শিকার হওয়া এক মুসলিম কর্মীর পাশে দাঁড়িয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছেন।
ক্যুমো আরো জানান, নিউইয়র্ক তথা আমেরিকা ধর্মীয় সম্প্রীতির এক অনন্য স্থান। তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে এই ঐতিহ্য আরও সমুন্নত রাখবেন।
এসময় এম আজিজ ও ফাহাদ সোলায়মান ক্যুমোর পক্ষে সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানান। ফাহাদ বলেন, বর্তমান প্রার্থী জোহরান মামদানি মুসলমান পরিচয় দাবি করলেও কমিউনিটির পাশে কখনো দাঁড়াননি। জ্যাকসন হাইটসের ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের ভোগান্তি, ট্রাফিক ও পার্কিং সমস্যার সমাধানে ক্যুমো কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, নির্বাচনী লড়াইয়ে ক্যুমোর পথ মোটেও সহজ নয়। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী বাছাইয়ে মুসলিম-আমেরিকান প্রার্থী জোহরান মামদানির কাছে হেরে গেছেন তিনি। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রকাশ্য সমর্থন পাওয়ায় নতুন প্রজন্মের ভোটারদের মধ্যে ক্যুমোর প্রতি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে। গাজা পরিস্থিতি নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থানও তরুণ ভোটারদের ক্ষুব্ধ করেছে।
জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে মামদানি : জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে (জেএমসি) জুমার নামাজ আদায় করেন নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের মনোনীত প্রার্থী জোহরান মামদানি। গত ৩ অক্টোবর শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে একটি জানাজা ও দোয়ায় অংশ নেন তিনি। পরে তিনি সমবেত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন।
মামদানি বলেন, নিউইয়র্কবাসীর জন্য সমান সম্ভাবনা ও সুযোগ সৃষ্টি করতে চান তিনি। এসময় ভোটাধিকার নিশ্চিতে সবাইকে আগামী ২৫ অক্টোবরের মধ্যে ভোটার রেজিস্ট্রেশন করার আহ্বান জানান তিনি।
মামদানি মেয়র নির্বাচিত হলে মুসলমানরা তাদের ধর্মের জন্য আরো বেশি গর্বিত হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এসময় তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী অ্যান্ড্রু ক্যুমোর নানা মন্তব্যের সমালোচনা করে তার প্রচারে তিনি ভীত নন দাবি করেন।
এসময় বাংলাদেশি-আমেরিকানরাও বক্তব্য রাখেন। তাদের মধ্যে ছিলেন এনওয়াইপিডির ডেপুটি ইন্সপেক্টর কারাম চৌধুরী, বাপার সাধারণ সম্পাদক রাসেকুর মালেক, সিটি অ্যাডুকেশনাল পলিসির চেয়ার শামসুল হক ও জ্যামাইকা-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার। তারা সবাই মামদানিকে জয়ী করার আহ্বান জানান।
এখানে উল্লেখ্য, মামদানির ভোট ব্যাংকেও ফাটল ধরতে শুরু করেছে। বাংলাদেশি-আমেরিকান কমিউনিটি ছাড়াও আফ্রিকান-আমেরিকান ও স্প্যানিশ মুসলিম ভোটারদের একটি অংশ তার প্রতি সমর্থন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে।