মোদির রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস...

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক ক্যারিয়ার...

পাকিস্তান–আফগানিস্তান উত্তেজনা নিরসনে মধ্যস্থতায়...

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে...

পেসার মারুফা আক্তার এইচএসসি...

২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এবার ৯টি সাধারণ...

আরও দুই ইসরাইলি জিম্মির...

আরও দুই ইসরাইলি জিম্মির মৃতদেহ ফেরত দিয়েছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। ডিএনএ পরীক্ষার...
Homeআন্তর্জাতিকচাটুকারিতাকে যেভাবে পররাষ্ট্রনীতিতে রূপ দিলেন শেহবাজ শরিফ

চাটুকারিতাকে যেভাবে পররাষ্ট্রনীতিতে রূপ দিলেন শেহবাজ শরিফ

মিসরের শারম আল-শেখ শহরে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এক অভিনব কূটনৈতিক নাটকের জন্ম দিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। গাজায় যুদ্ধবিরতি, পুনর্গঠন ও ভবিষ্যৎ শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করতে আয়োজিত এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বের অন্তত ২০টি দেশের সরকারপ্রধান— যাদের মধ্যে ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ সিসি, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।

কিন্তু গাজার সংকট নিয়ে আলোচনা শুরুর আগেই সম্মেলনের গাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশ হঠাৎ বদলে যায়। শেহবাজ শরিফের বক্তব্য যেন কূটনীতি নয়, প্রশংসার এক অভিনয় মঞ্চে পরিণত হয়।

প্রশংসার বন্যায় শারম আল-শেখ সম্মেলন

শেহবাজ শরিফ তার বক্তব্যে গাজার মানবিক বিপর্যয় বা শান্তি প্রক্রিয়ার রূপরেখা নিয়ে তেমন কিছু বলেননি। বরং পুরো মনোযোগ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রশংসা করতে। ট্রাম্পকে তিনি আখ্যা দেন ‘শান্তির দূত’ হিসেবে, স্মরণ করিয়ে দেন তার নোবেল শান্তি পুরস্কারে মনোনয়নের কথা এবং ভারতের সঙ্গে সংঘাত প্রশমনের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।

শেহবাজের এই কথাগুলো শোনার সময় সম্মেলন কক্ষের পরিবেশ ছিল অদ্ভুত নীরব। অনেক নেতা বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন তার দিকে। কেউ করতালিতে যোগ দেননি, কেউ কেবল তাকিয়ে ছিলেন। কিন্তু ট্রাম্পের মুখে ফুটে ওঠে আত্মতৃপ্তির হাসি। মাঝে মাঝে তিনি মাথা নেড়ে সম্মতি জানান, যেন এই প্রশংসা তার কাছে ছিল প্রত্যাশিতই।

চাটুকারিতা হয়ে উঠল কূটনীতির নতুন রূপ

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, শেহবাজ শরিফের এই পদক্ষেপকে প্রচলিত কূটনীতির পরিপন্থি বলা হলেও এর পেছনে ছিল স্পষ্ট রাজনৈতিক কৌশল। কারণ ট্রাম্পের মতো আত্মকেন্দ্রিক নেতার ক্ষেত্রে প্রশংসা হয়ে ওঠে একধরনের ‘কূটনৈতিক মুদ্রা’, যা দিয়ে কেনা যায় মনোযোগ, সদিচ্ছা ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কের সুযোগ।

মনোবিজ্ঞানীরা একে বলেন, “নার্সিসিস্টিক রিওয়ার্ড লুপ”— এক ধরনের মানসিক প্রতিক্রিয়া যেখানে প্রশংসা বাস্তবতার চেয়ে বেশি কার্যকর হয়ে ওঠে। বাস্তবতা তুলে ধরলে যে ফল পাওয়া যায় না, প্রশংসা করে তা অর্জন করা যায় আরও সহজে। শেহবাজ ঠিক সেটিই করেছেন— তিনি গাজার বাস্তবতা নয়, ট্রাম্পের অহংবোধকে সন্তুষ্ট করেছেন।

গণমাধ্যমের যুগে নীতি নয়, প্রভাবই মুখ্য

সম্মেলনের মূল আলোচ্য ছিল গাজার যুদ্ধবিরতি ও পুনর্গঠন, কিন্তু শেহবাজ শরিফের ভাষণে তার ছায়াও পড়েনি। তিনি হয়তো জানতেন, ট্রাম্পের প্রশংসা করেই পাওয়া যাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটি— মনোযোগ। এই মনোযোগই হতে পারে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক পুঁজি, যা দিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজের অবস্থান মজবুত করা যায়।

বর্তমান গণমাধ্যমনির্ভর রাজনীতিতে নেতাদের লক্ষ্য এখন আর কূটনৈতিক ফল নয়, বরং প্রচারণার প্রভাব সৃষ্টি করা। শেহবাজের প্রশংসাসূচক ভাষণ হয়তো গাজার শান্তি আনতে পারবে না, কিন্তু ট্রাম্পের হাসি, তার প্রতিক্রিয়া ও সম্মেলন কক্ষে সেই মুহূর্ত— এসবই সংবাদমাধ্যমের জন্য হয়ে উঠেছে খবরের উপাদান।

অযৌক্তিকতার মধ্যেও সফলতার পাঠ

ঘটনাটি প্রমাণ করেছে যে, আধুনিক বিশ্বরাজনীতিতে যুক্তি, নীতি বা কৌশলের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে ‘দৃশ্যমান প্রভাব’। শেহবাজ শরিফের বক্তব্য হয়তো কূটনীতির ইতিহাসে এক উদ্ভট অধ্যায় হিসেবেই থাকবে, কিন্তু বাস্তবে তিনি যা চেয়েছিলেন— সেটিই অর্জন করেছেন।

শেষ পর্যন্ত শারম আল-শেখের মঞ্চে দুটি দৃশ্যই সবচেয়ে স্পষ্টভাবে মনে থাকবে : একদিকে নীরব ও হতবাক বিশ্বনেতারা, আর অন্যদিকে প্রশংসায় উজ্জ্বল মুখে হাসতে থাকা ডোনাল্ড ট্রাম্প। হয়তো এখানেই লুকিয়ে আছে আজকের রাজনীতির এক নির্মম সত্য— কূটনীতির আসল মুদ্রা এখন নীতি নয়, চাটুকারিতাই।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments