ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন লুৎফুল্লাহেল মাজেদ। তিনি উপজেলা বিএনপিরও আহ্বায়ক। বিগত সরকারের শেষ সময়ে ‘আয়নাঘরে’ বন্দি থাকা মাজেদকে ৩০ মিনিট সময় বেঁধে দিয়ে গুলি করে হত্যার কথা জানানো হয়েছিল। কিন্তু সরকার পতনের পর মুক্ত হয়ে এবার দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা।
গত বছরের ৩০ জুলাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি দল লুৎফুল্লাহেল মাজেদকে তাঁর গুলশানের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ৬ আগস্ট তিনি মুক্তি পান। সিটিটিসির (পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম) একটি দল তাঁকে তাঁর গুলশানের বাসা থেকে তুলে কথিত আয়নাঘরে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে আটকে রেখে তাঁর ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হয়। গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারিতে গুমের পর নির্মম নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে দেওয়া অভিযোগও দিয়েছেন তিনি। বেঁচে ফেরা অনিশ্চিত থাকা লুৎফুল্লাহেল মাজেদ এবার প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত দলীয় নেতাকর্মীরা। মনোনয়ন ঘোষণার পরপরই নেতাকর্মীরা এলাকাটিতে আনন্দ মিছিল করেন, সন্তুষ্টি প্রকাশ করে ফেসবুকেও পোস্ট করেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
ময়মনসিংহ উত্তর জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আমাদের সংসদীয় আসনে কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এ জনপদের বঞ্চিত মানুষ এবার লুৎফুল্লাহেল মাজেদ ভাইকে ধানের শীষে ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। বিপুল ভোটে তিনি বিজয়ী হবেন বলে আমরা আশা করছি।
বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পাওয়া ব্যবসায়ী লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বলেন, আমাকে চোখ বেঁধে বাসা থেকে আয়নাঘরে নিয়ে মাত্র ৩০ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে আমাকে গুলিকরে হত্যা করে আন্দোলনকারীদের গুলিতে আমার মৃত্যু হয়েছে বলে চালিয়ে দেওয়ার আলাপ করা হচ্ছিল। এর ভেতরে বলতে হবে আন্দোলনের জন্য কাদেরকে টাকা দিয়েছি। সে সময় উত্তরা থানা পুড়িয়ে দেওয়ার খবরে কিছুটা পিছপা হয়। এরপর আমাকে প্রচন্ড নির্যাতন চালায়। নির্যাতন শেষে আমাকে একটি স্টেটমেন্টে স্বাক্ষর করায়, সেখানে বলা হয় আমার নেতৃত্বে উত্তরা পূর্ব থানা পোড়ানো হয়েছে। সাংবাদিকরা আসলে যেনো আমি বলি আমি ফান্ডিং করেছে, এবং আরও কয়েকজনের নাম বলে দেয় তাদের নাম বলতে বলা হয়।
তিনি আরও বলেন, আয়নাঘর থেকে বেঁচে ফেরত আসতে পারবো তা সে সময়ে কল্পনা করতে পারিনি। কিন্তু এখন দল আমাকে মনোনয়ন দিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জ ও দায়িত্ব দিয়েছে। গত ১৭ বছরে ঈশ্বরগঞ্জের সড়ক যোগাযোগে কোনো কাজ হয়নি। জনগণের ভোটে আমি এমপি হতে পারলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাবো। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকেও অগ্রাধিকার রেখে কাজ করা হবে। তরুণ ও শিক্ষিত বেকারদের জন্য এ অঞ্চলে কর্মসংস্থানের কোনো ব্যবস্থা নেই। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। দক্ষ জনশক্তি গড়তে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। পিছিয়ে থাকা একটি সম্ভাবনাময় জনপদকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
এ সংসদীয় আসনটিতে বিএনপি ছাড়াও জামায়াতে ইসলামীর দলীয় প্রার্থী মঞ্জুরুল হক ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুফতী হাবিবুল্লাহ প্রচারণায় আছেন।