রাজশাহীর মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আব্দুর রহমানের বাসভবনে বর্বরোচিত হামলায় তার ছেলে তাওসিফ রহমান সুমন নিহত ও স্ত্রী তাসমিন নাহার গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। ঘটনাটিকে বিচার বিভাগের জন্য অভূতপূর্ব দুঃখজনক ও নিরাপত্তাহীনতার চরম বহিঃপ্রকাশ বলে উল্লেখ করে তারা দুই দফা দাবি উত্থাপন করেছেন এবং বাস্তবায়নের জন্য দিয়েছেন ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম।
আজ ১৪ নভেম্বর (শুক্রবার) অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম ও মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে দাবি জানানো হয়—
প্রথমত, দেশের সব আদালত, বিচারকদের বাসভবন ও যাতায়াতে অবিলম্বে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, রাজশাহীতে ঘটে যাওয়া হামলার ঘটনায় নিরাপত্তা অবহেলা এবং গ্রেপ্তার আসামিকে আইনবহির্ভূতভাবে গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন করে অপেশাদার আচরণ প্রদর্শনের দায়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
অ্যাসোসিয়েশন হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ দুই দাবি বাস্তবায়ন না হলে ১৬ নভেম্বর থেকে সারাদেশের বিচারকরা কলম বিরতিসহ কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, দিনের আলোয় বিচারক পরিবারের ওপর এমন নৃশংস হামলায় বিচার বিভাগ স্তম্ভিত ও বাকরুদ্ধ। সুপ্রিম কোর্ট বারবার আদালত, ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণ, এজলাস ও বিচারকদের বাসভবনের নিরাপত্তা জোরদারের অনুরোধ করলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
অ্যাসোসিয়েশনের ভাষ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা বিচারকরা এবং তাদের পরিবার দীর্ঘদিন ধরেই নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বসবাস করছেন। অনেক জেলা আদালতে সরকারি আবাসন ও পরিবহন সুবিধার গুরুতর ঘাটতি রয়েছে। চৌকি আদালতের বিচারকদের অবস্থা আরও করুণ—তাদের অনেককে ভাড়া বাসায় অরক্ষিত অবস্থায় থাকতে হয়, এমনকি অনেক সময় রিকশা, ভ্যান বা পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে হয়।
এই অব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা সংকটের কারণেই আজকের এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে বলে অ্যাসোসিয়েশন দাবি করে। তাদের মতে, এই রক্তের দায় কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বিচারক আব্দুর রহমানের বাসায় ঢুকে এক ব্যক্তি তার ছেলে সুমনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে এবং স্ত্রীকে আহত করে। হামলাকারীও আহত অবস্থায় আটক হয়। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে আরএমপি কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান জানান, হামলাকারীর পকেটে পাওয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখে ধারণা করা হচ্ছে তিনি একটি গাড়ির চালক এবং তার সঙ্গে পূর্ববিরোধের সম্ভাবনা রয়েছে।