ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ সোমবার। গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত তারা। এ মামলার অন্য দুই অভিযুক্ত হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন। মোট পাঁচটি অভিযোগে অভিযুক্ত তিন আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার একমাত্র আসামি সাবেক আইজিপি মামুন ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হিসেবে এ মামলায় সাক্ষ্য ও জবানবন্দি দিয়েছেন।
প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে এই মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, আসামিদের নির্দোষ দাবি করে খালাস চেয়েছেন তাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী। এ ছাড়া রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনের খালাস চেয়েছেন তার আইনজীবী। রায়টি ঘিরে সারা দেশে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। সবার নজর আজ ট্রাইব্যুনালের রায়ের দিকে। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কী রায় হতে যাচ্ছে, সেটা জানতে মুখিয়ে আছে পুরো জাতি। এ ছাড়া বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে বিশ্বের অনেক মানুষও। তাই এ রায় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, পূর্বঘোষিত তারিখ অনুযায়ী রায় ঘোষণার সব প্রস্তুতি এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। বেলা ১১টার দিকে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করবেন। এই ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
রায়ের বিষয়ে গতকাল রোববার প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামীম সাংবাদিকদের বলেন, সোমবার এই মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে। ট্রাইব্যুনাল বেলা ১১টায় এজলাসে উঠবেন। আমরা আসামিদের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছি এবং সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছি। ট্রাইব্যুনাল ন্যায়বিচারের স্বার্থে যে আদেশই দিক না কেন, প্রসিকিউশন সেটা মেনে নেবে।’ তিনি আরও বলেন, এই রায়টি বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। সেই সঙ্গে বিটিভি থেকে দেশের অন্য টেলিভিশন তা সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবে। এ ছাড়া বিটিভি থেকে রায়টি রয়টার্স সরাসরি সম্প্রচার করবে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। অন্যদিকে, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে বড় পর্দা বসাবে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ফলে ঢাকাবাসী সহজেই এই রায় ঘোষণা দেখতে ও শুনতে পারবেন।
এদিকে, ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণার পর আবারও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম। গতকাল ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনাসহ আসামিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে সেটা শহীদ পরিবার ও আহতদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়ার জন্যও তারা আবেদন করেছেন। আমরা ট্রাইব্যুনালে তার (শেখ হাসিনা) সর্বোচ্চ শাস্তি প্রার্থনা করেছি। শুধু তাই নয়, একই সঙ্গে এই আসামিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে মামলায় যারা ভিকটিম বা শহীদ আছে, আহত পরিবার আছে—তাদের বরাবর হস্তান্তরের প্রার্থনা জানিয়েছি।’
রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও চলছে উত্তেজনা। নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অনলাইনে ঘোষণা দিয়ে ১৬ ও ১৭ নভেম্বর কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তৎপর রয়েছে। চারটি জেলায় র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পাশাপাশি আজও সেনাবাহিনী মোতায়েনের জন্য সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে গতকাল সেনা সদর দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
রায় ঘোষণার আগের দিন পূর্ণ ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নিজের ফেসবুক পেজে এ-সংক্রান্ত এক পোস্টে গতকাল তিনি বলেন, ‘আগামীকাল (১৭ নভেম্বর) বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণা করতে যাচ্ছে, যেখানে গত বছরের ঢাকায় সংঘটিত প্রাণঘাতী সহিংসতা ও দমন-পীড়নের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। আমরা পূর্ণ ন্যায়বিচার এবং স্বচ্ছতা দাবি জানাই।’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গতকাল বলেছেন, ‘রায় যা-ই হোক না কেন, তা কার্যকর হবে। এ নিয়ে দেশে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হলে তা প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত আছে।’