জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের অনুপস্থিতিতে বিচার এবং মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনটি সোমবার (১৭ নভেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, দুইজনের অনুপস্থিতিতেই বিচার করে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে এবং তারা নিজেদের পছন্দের আইনজীবীর মাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব পাননি। যা গুরুতর মানবাধিকার উদ্বেগ।
এইচআরডব্লিউ বলেছে, এ মামলার তৃতীয় আসামি সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন। তিনি প্রসিকিউশনের সাক্ষী (রাজসাক্ষী) হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। তাকে সাজা কমিয়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
সংস্থাটির ডেপুটি এশিয়া ডিরেক্টর মিনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, ‘হাসিনার দমন-পীড়নমূলক শাসনামলের ওপরে বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভ-হতাশা রয়েছে, কিন্তু এরপরও সকল ফৌজদারি কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের সব মানদণ্ড পূরণ করতে হবে। নিরপেক্ষ তদন্ত এবং বিশ্বাসযোগ্য বিচারের মাধ্যমে হাসিনার প্রশাসনের অধীনে ভয়াবহ নির্যাতনের জন্য দায়ীদের জবাবদিহি করা উচিত।’
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার প্রশাসনের নির্যাতনের জন্য দায়ীদের যথাযথভাবে জবাবদিহি করা উচিত। এই মৃত্যুদণ্ডের রায়ের ফলে সঠিক বিচার নিয়ে উদ্বেগ আরো অনেক বেড়ে যাবে বলে মনে করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
এইচআরডব্লিউ বলছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার কার্যালয় এবং বাংলাদেশ সরকার ২০২৫ সালের জুলাই মাসে ‘মানবাধিকারের প্রচার ও সুরক্ষায় সহায়তা করার লক্ষ্যে’ দেশে একটি মিশন খোলার জন্য তিন বছরের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। এই ধরনের সহায়তার জন্য মৃত্যুদণ্ডের ওপর স্থগিতাদেশ প্রয়োজন, বলে মনে করছে সংস্থাটি।
সোমবার খুনি হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর)। প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই রায়কে ‘সুষ্ঠু ও ন্যায়সঙ্গত হয়নি’ বলে দাবি করেছে এবং প্রতিবেশি দেশ ভারতও বিবৃতি দিয়েছে। বর্তমানে হাসিনা পলাতক হিসেবে আছেন। তাই তিনি ফাঁসির এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন না।
এরআগে, সোমবার (১৭ নভেম্বর) বেলা ২ টা ৫০ মিনিটে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল হাসিনার ফাঁসির রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আদালত বলেছে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। একটিতে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং অন্য দুটি অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।