নিউইয়র্কের জেএফকে এয়ারপোর্টে সোমবার দুপুরে ‘স্বাগত’ ও ‘প্রতিরোধ’ সমাবেশ ঘিরে তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করে কম্যুনিটিতে। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিসহ সহযোগী এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে স্বাগত জানানোর ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।
একই সময়ে তুমুল বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও সমমনা সংগঠনগুলো। পরস্পরবিরোধী কর্মসূচিতে হাজারো প্রবাসীর সমাগম ঘটানোর সংকল্প ব্যক্ত করা হয়েছে ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত উভয় পক্ষের প্রস্তুতি সভায়।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী-সমর্থকরা ইতোমধ্যেই ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, মিশিগান, শিকাগো, বোস্টন, পেনসিলভেনিয়া, ভার্জিনিয়া, ম্যারিল্যান্ড, নিউজার্সি, কানেকটিকাট থেকে নিউইয়র্কে জড়ো হয়েছেন। তারা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ‘যেখানে ইউনূস-সেখানেই প্রতিরোধ’ কর্মসূচি পালন করবেন বলে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, সেক্রেটারি সামাদ আজাদ, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলীয় শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম ফজলুর রহমান ও সেক্রেটারি ডা. মোহাম্মদ আলী মানিক, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ইমদাদ চৌধুরী পৃথক পৃথকভাবে জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে মুহাম্মদ ইউনূস যে হোটেলে অবস্থান করবেন তার সামনেও প্রতিদিন অবস্থান এবং কালো পতাকা প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে। ২৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার জাতিসংঘে ড. ইউনূসের ভাষণের সময়েও বাইরে কালো পতাকা প্রদর্শন ও বিক্ষোভ-সমাবেশ; পরদিন ২৭ সেপ্টেম্বর অপরাহ্নে টাইমস স্কোয়ার সংলগ্ন ম্যারিয়ট মারক্যুস হোটেলে ড. ইউনূসের মতবিনিময় সমাবেশের বাইরেও বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য নিউইয়র্ক সিটি প্রশাসনের অনুমতি সংগ্রহ করা হয়েছে।
অপরদিকে, ২০ সেপ্টেম্বর জ্যাকসন হাইটসে নবান্ন রেস্টুরেন্টের সামনে বিএনপির সমাবেশ থেকে মুহাম্মদ ইউনূস ও তার সফরসঙ্গী হিসাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিশিষ্টজনদের ২২ সেপ্টেম্বর (সোমবার) জেএফকে এয়ারপোর্টে স্বাগত জানানোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য আব্দুল লতিফ সম্রাট, গিয়াস আহমেদ ও জিল্লুর রহমান জিল্লুর, বিএনপি চেয়ারপার্সনের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির অন্যতম সদস্য গোলাম ফারুক শাহীন, নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির সভাপতি মাওলানা আতিকুর রহমান, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জসিমউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমানসহ সর্বস্তরের নেতারা বক্তব্য দিয়েছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের সব কর্মসূচি রুখে দেওয়ার সংকল্পও ব্যক্ত করা হয়েছে। ফলে কম্যুনিটিতে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
আর এই উত্তেজনাকে উসকে দেওয়া হয়েছে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তজা কর্তৃক নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কয়েকজনকে গ্রেফতারের তথ্য উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে। এটাকে ‘ডাহা মিথ্যা’ এবং ইউনূসবিরোধী বিক্ষোভকে থামিয়ে দেওয়ার নীল নকশার অংশ হিসাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতারা অভিযোগ করেছেন।
তারা বলেন, গোলাম মোর্তজার বিবৃতিতেই গ্রেফতারের মিথ্যাচারের বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে। গত মাসে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম নিউইয়র্ক কন্স্যুলেটে এক মতবিনিময় সমাবেশে যোগদানকালে বাইরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভের সময় কিছু ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সেই হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাটি স্টেট ডিপার্টমেন্টকে অবহিত করার পর একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেফতারের কথা বলার ওই পোস্টে গোলাম মোর্তজা বলেছেন, তদন্ত শেষ হওয়ার পরই মামলা করার ধাপ আসবে। এখনো কোনো মামলা হয়নি, কেবল অভিযোগ জানানো হয়েছে। এটিই যুক্তরাষ্ট্রের আইনি প্রক্রিয়া।
‘মোর্তজার এমন বিবৃতিতেই স্পষ্ট হয়েছে কাউকে গ্রেফতারের মিথ্যা তথ্য উপস্থাপনার বিষয়টি’-উল্লেখ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান। তাই কাউকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে