৬২২ খ্রিস্টাব্দে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন মহানবী (সা.)। তিনি যে পথে মদিনায় গমন করেন তা ছিল অত্যন্ত দুর্গম। শত্রুদের এড়াতে তাঁকে সাধারণ পথ এড়িয়ে দুর্গম পথে চলতে হয়েছিল। বর্তমানে মক্কা থেকে মদিনায় যাওয়ার উন্নত পথ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। তারপরও তবুও নবীজি (সা.)-এর পদচিহ্ন অনুসরণ করে মদিনায় যেতে চায় অনেকেই। তারা এর মাধ্যমে ইসলামের ইতিহাস ও মহানবী (সা.)-এর আধ্যাত্মিক সৌরভ লাভ করতে চায়। সম্প্রতি এমনই একটি কাফেলা হিজরতের পথ ধরে মক্কা থেকে মদিনায় পৌঁছেছে। সপ্তাহব্যাপী এই সফরের আয়োজন করেছিল যুক্তরাজ্যভিত্তিক হিজরাহ হাব। তাদেরকে সহযোগিতা করেছিল সৌদি আরবের অভিজ্ঞ পথনির্দেশকরা। বিশ্বের ১৫টি দেশের নাগরিক কাফেলায় অংশ নেয়।
মক্কা থেকে মদিনার দূরত্ব ৪৫০ কিলোমিটার। এর মধ্যে কাফেলাটি ৩১৫ কিলোমিটার অতিক্রম করে হিজরতের ঐতিহাসিক পথ ধরে। তারা পায়ে হেঁটে, উটে চড়ে এবং গাড়িতে আরোহন করে এই পথ অতিক্রম করে। এ সময় তারা হিজরতের পথ ও এই পথের উল্লেখযোগ্য নিদর্শন ও স্থানগুলো পরিদর্শন করে। মদিনায় পৌঁছানোর পর কাফেলাটি সর্বপ্রথম মসজিদে কুবায় গমন করে। হিজরতের পর মহানবী (সা.) কিছুদিন এখানে অবস্থান করেন এবং এটিই ইসলামের ইতিহাসের প্রথম মসজিদ। এখানে কাফেলাকে ফুল ও দোয়া দ্বারা অভিনন্দিত করা হয়। অতঃপর তারা মসজিদে নববীতে যায়, যেখানে প্রিয়নবী (সা.) শায়িত আছেন।
হিজরা হাবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ওয়াসিম মাহমুদ বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা তিনটি সফর সম্পন্ন করেছি। তবে এবারের সফরটি অনেক বেশি প্রগাঢ় ও অনন্য ছিল। আমরা আনন্দিত হয়েছি, কেঁদেছি, অনুপ্রাণিত হয়েছি এবং উদযাপন করেছি। এখন আমি কেবল আনন্দ ও কৃতজ্ঞতা অনুভব করছি। আলহামদুলিল্লাহ, আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শহরে পৌঁছেছি। আমরা আল্লাহর কাছে এই যাত্রাকে নবীজি (সা.)-এর অনুসরণের অংশ হিসেবেই পেশ করতে চাই।
যুক্তরাজ্য থেকে অংশগ্রহণকারী তেলহাত মাহমুদ এক আশ্চর্য অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমার টাইপ-১ ডায়াবেটিক আছে। আশ্চর্য বিষয় হলো, গত পাঁচ দিনে আমি ইনসুলিন নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করিনি। এই যাত্রার আগে দৈনিক আমি চার বার ইনসুলিন ইনজেকশন করতাম। কিন্তু মরুপথে হাঁটা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর চর্চা আমাকে ইনসুলিন ছাড়াই নিজেকে সামলে নিতে সাহায্য করেছে। এই যাত্রার অভিজ্ঞতা আমার কাছে ওমরাহর মতোই মনে হয়েছে। আমি আশা করি, যাদের সুযোগ আছে তারা এই যাত্রায় অংশ নেবে। কেননা এর আধ্যাতিক ও মানসিক প্রভাব অত্যন্ত ইতিবাচক।
অপর অংশগ্রহণকারী মুহাম্মদ সাত্তার বলেন, এই যাত্রা অত্যন্ত আবেগঘণ অসাধারণ ছিল। আমি মদিনায় পৌঁছানোর জন্য আপ্লুত ছিলাম। যাত্রার সময় আমরা খুব সকালে উঠতাম এবং আনন্দ অনুভব করতাম। আমরা এক সঙ্গে কয়েকদিন হেঁটেছি, মরুভূমিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়েছি, তাঁবুতে ঘুমিয়েছি এবং আমাদের জীবনকে ভাগাভাগি করেছি। এই যাত্রা ছিল ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসায় পূর্ণ। আমরা এক সঙ্গে খেয়েছি, নামাজ ও মোনাজাত করেছি এবং পাশাপাশি হেঁটেছি। এই যাত্রার আধ্যাত্মিক প্রতিফলনও অত্যন্ত গভীর। আমি পুরো পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম কিন্তু আমার আত্মার সঙ্গে সংযুক্ত ছিলাম। এই সফর আমার জীবনের মাইলফলক হয়ে থাকবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা নবীজি (সা.)-এর পথ অনুসরণ করে পাহাড়, গ্রাম ও মরুভূমি অতিক্রম করেছি। এটাও আমাদের জন্য খুব সহজ ছিল না, কিন্তু আমরা ভেবেছি, আমরা যতটুকু সুবিধা ভোগ করছি তাও তো রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট ছিল না। যেমন প্রস্তুত খাবার ও গাড়ি। এটা ভাবতেই তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা বহুগুণে বেড়ে যায়।