কর্মী নিয়োগে মালয়েশিয়ার ১০ শর্ত পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশের জনশক্তি ব্যবসায়ীরা। শর্তে সরকারের আপত্তির কথা জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলও। তিনি বলেছেন, এসব পূরণ করতে গেলে আবারও সিন্ডিকেট হবে, তা মালয়েশিয়াকে জানিয়েছি। সরকার আর সিন্ডিকেট হতে দেবে না।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে নিরাপদ অভিবাসন এবং ন্যায্য নিয়োগে ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট প্ল্যাটফর্ম (ওইপি) উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা।
এর আগে গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে জনশক্তি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বায়রা সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্ট ১০ শর্ত পরিবর্তনের দাবি জানায়।
বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে মালয়েশিয়া শর্ত দিয়েছে রিক্রুটিং এজেন্সির ১০ হাজার বর্গফুটের অফিস থাকতে হবে। একই অফিস থেকে তিন বছরে ন্যূনতম তিন হাজার কর্মী পাঠানোর প্রমাণ থাকতে হবে। ভিন্ন ভিন্ন দেশের নিয়োগকর্তার প্রশংসাপত্র এবং নিজের নামে ও তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থাকতে হবে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, এসব শর্ত দেশের ২২০০ রিক্রুটিং এজেন্সির ৯৯ শতাংশই পূরণ করতে পারবে না। ফলে বাকি ১ শতাংশ এজেন্সির সিন্ডিকেট হবে। বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে ২০১৫ সালে ১০ রিক্রুটিং এজেন্সিকে কাজ দেয় মালয়েশিয়া, যা সিন্ডিকেট নামে পরিচিতি পায়। এ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৮ সালে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দেশটি।
তবে ২০২২ সালে এ পদ্ধতিতেই ২৫ এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর কাজ দেয় মালয়েশিয়া। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির এমপি-মন্ত্রী এবং নেতাদের এজেন্সি ছিল এই তালিকায়। যাদের অধিকাংশের কর্মী পাঠানোর অভিজ্ঞতা ছিল না। পরে আরও ৭৬ এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর কাজ দেয় মালয়েশিয়া, যা সিন্ডিকেট নামে পরিচিতি পায়।
গত বছরের মে মাসে নিয়োগ বন্ধের আগে পৌনে ৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় যান। চুক্তিতে ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হলেও কর্মীপ্রতি গড়ে ৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা করে নেয় বাংলাদেশি এজেন্সি এবং মালয়েশিয়ায় নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা সিন্ডিকেট। প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে মামলা চলছে।
মালয়েশিয়া নতুন করে কর্মী নিয়োগে মামলা তুলে তদন্ত বন্ধে বাংলাদেশকে চিঠি দিয়েছে। এ বিতর্কের মধ্যে ১০ শর্ত দিয়েছে দেশটি। আসিফ নজরুল বলেন, কয়েকটি শর্তে বাংলাদেশ শক্ত আপত্তি জানিয়েছে। রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে কথা বলে মালয়েশিয়াকে জানিয়েছি, এসব শর্ত পূরণ করলে অল্প কয়েকটি এজেন্সি কর্মী পাঠানোর সুযোগ পাবে। আবার সিন্ডিকেট হবে। মালয়েশিয়া বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছে। সব এজেন্সির জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত কূটনৈতিক আলোচনা অব্যাহত থাকবে।
উপদেষ্টা ওইপি নামে যে প্ল্যাটফর্ম উদ্বোধন করেছেন, সেটি প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং সুইজারল্যান্ড সরকারের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয়েছে। এতে বিদেশগামী কর্মী, এজেন্সি, বিএমইটি, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বিদেশি নিয়োগকর্তা ও ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ যুক্ত থাকবে। সরকারের পক্ষে বলা হয়েছে, এতে স্বচ্ছতা আসবে, অভিবাসন ব্যয় কমবে।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. নিয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম, ঢাকায় সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন ডেইপাক এলমার এবং আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ম্যাক্স টুনন।
প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে জনশক্তি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বায়রার সাবেক সভাপতি এম এ এইচ সেলিম বলেন, সরকার আলোচনা ছাড়াই মালয়েশিয়ার ১০ শর্ত পূরণ করে আবেদন করতে ২৯ অক্টোবর এজেন্সিকে নির্দেশ দিয়েছে। এসব শর্ত মানলে কর্মীদের অভিবাসন খরচ বৃদ্ধি পাবে।
সৌদি আরবে কর্মী পাঠাতে ২৪ কর্মী পর্যন্ত ভিসা সত্যায়ন ছাড়াই বহির্গমন ছাড়পত্র দেওয়া এবং বায়রার সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।