শুধু সরকার বদলের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করা যাবে না, বরং পুঁজিবাদী ব্যবস্থার কাঠামোর বদল ঘটাতে হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সমন্বয়ক মাসুদ রানা। শ্রমিক শ্রেণির যথার্থ বিপ্লবী দলের নেতৃত্বে বর্তমান বৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থা বদলের সংগ্রামকে বেগবান করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মহান রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ১০৮তম ও বাসদের (মার্ক্সবাদী) ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিকেলে জনসভা শুরুর আগে দলের নেতা-কর্মীরা বর্ণাঢ্য র্যালি নিয়ে শাহবাগ থেকে কাঁটাবন, সায়েন্স ল্যাব মোড় ঘুরে আবার শাহবাগে এসে মিলিত হয়। জনসভায় সারা দেশের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী অংশগ্রহণ করেন।
জনসভায় মাসুদ রানা বলেন, ‘সরকার পাল্টানোর মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ পরাস্ত হয় না। যে শোষণমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার কাঠামো বিদ্যমান, তাকে না পাল্টাতে পারলে ফ্যাসিবাদ হটানো যাবে না। ইতিহাস এই শিক্ষা আমাদের সামনে রেখে গেছে।’
অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের নানামুখী গণতান্ত্রিক সংস্কারের স্বাভাবিক প্রত্যাশা অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে পূরণ তো হয়নি, উল্টো বিভিন্ন মত-পথের মানুষ জীবনের ঝুঁকিসহ নানা আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। মব তৈরি করে নারীকে আক্রমণ, মাজার ভাঙা, বাউলদের ওপর আক্রমণ কোনোটাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার ঠেকাতে পারেনি।
জুলাই জাতীয় সনদ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করতে পারেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পরে রাষ্ট্র সংস্কারের যে দাবি উঠেছে, এর মূল নির্যাস ছিল এই যে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে, নির্বাচনব্যবস্থাকে যেভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে তাদের ফিরিয়ে আনা ও সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর যে একচ্ছত্র ক্ষমতা, সেটাকে কমিয়ে একটা ভারসাম্যে নিয়ে আসা। সংবিধানের মূলনীতির আলোচনাটি এই উদ্দেশ্যের অন্তর্ভুক্ত নয়।
আদর্শিক-রাজনৈতিক বিষয়গুলোকে আলোচনার বাইরে রাখা উচিত জানিয়ে মাসুদ রানা বলেন, কারণ, এ ব্যাপারে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য সম্ভব নয়। সনদে বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন দলের ‘নোট অব ডিসেন্ট’ থাকলেও অঙ্গীকারনামায় উল্লেখ করা হয়নি। জাতি গঠনের ইতিহাসও দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস সনদে ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।
মাসুদ রানা আরও বলেন, সাংবিধানিক নানা সংস্কারের কথা বলা হলেও এগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, তা সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। এ ছাড়া নারীর রাজনৈতিক অধিকার, শ্রমজীবী জনগণের আশু প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ মতামত যেগুলো নারী সংস্কার কমিশন ও শ্রম সংস্কার কমিশন দিয়েছিল, তা উপেক্ষিত হয়েছে।
বাসদের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সদস্য জয়দীপ ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় জনসভায় আরও বক্তব্য দেন নির্বাহী ফোরামের সদস্য শফিউদ্দিন কবীর আবিদ ও সীমা দত্ত।