বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক ঘোষণার মাধ্যমে অবিলম্বে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এর ভিত্তিতেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।
তিনি বলেন, হাজার হাজার ছাত্র–জনতার রক্তের বিনিময়ে সংঘটিত জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষাকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র চলছে। যারা আগামী সংসদের জন্য জুলাই সনদের বাস্তবায়ন ঠেলে দিতে চায়, তারা আসলে রাজনৈতিক সুবিধার খোঁজ করছে। এখনই দেশের ও জনগণের কল্যাণে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।তিনি জোর দিয়ে বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে জাতীয় বিপর্যয় অনিবার্য। এছাড়া কোনো নির্বাচনি প্রক্রিয়া দেশ ও জাতির কল্যাণ বয়ে আনবে না।
পাঁচ দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার বাদ আসর রাজধানীর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের যৌথ উদ্যোগে এক বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে জালালুদ্দীন এসব কথা বলেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মাওলানা আনোয়ার হোসেন রাজী এবং সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাকিবুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন- যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি।
এছাড়াও বক্তব্য দেন ও উপস্থিত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা ফয়সাল আহমদ, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা আবু সাঈদ নোমান, অফিস সম্পাদক মাওলানা রুহুল আমিন খান, প্রচার সম্পাদক মাওলানা হাসান জুনাইদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা ছানাউল্লাহ আমীনি, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুর্শিদ সিদ্দীকি, খেলাফত ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল আজিজ, খেলাফত যুব মজলিসের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা আল আবিদ শাকির, ঢাকা মহানগর উত্তরের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা এহসানুল হক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি মাওলানা ইলিয়াস হামিদী, গাজীপুর মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা কাজী নিজাম উদ্দিন ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক ডা. আলা আমিন রাকিব ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু হানিফ নোমান, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা নেয়ামতুল্লাহ আমিনসহ প্রমুখ।
প্রধান অতিথি মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, এই সরকারকেই সাংবিধানিক আদেশ কিংবা গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে এবং এর ভিত্তিতেই আগামী নির্বাচন হতে হবে।
তিনি বলেন, জুলাই গণহত্যার বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতি ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন অর্থহীন হবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, ফ্যাসিবাদের বিচার দৃশ্যমান না হলে জাতির ঐক্য টেকসই হবে না।
জালালুদ্দীন বলেন, প্রশাসনের ফ্যাসিবাদের লেসপেন্সাররা বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে। অবিলম্বে এদেরকে অপসারণ করতে হবে।
সংসদীয় কাঠামোর বিষয়ে তিনি বলেন, পিআর ছাড়া উচ্চকক্ষ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। সংসদে সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত না হলে দেশে স্থায়ী রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে না। বর্তমান পদ্ধতিতে ক্ষমতা একটি নির্দিষ্ট দলের হাতে কুক্ষিগত হয়ে পড়ে, যা ইনসাফ ও জাতীয় স্বার্থের জন্য হুমকি। প্রকৃত রাজনৈতিক বিকাশ ঘটাতে ও সংসদকে জাতির কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে রূপান্তর করতে হলে উচ্চকক্ষে পিআরের কোনো বিকল্প নেই।
জালালুদ্দীন আরও বলেন, অবিলম্বে আওয়ামী লীগের দোসর ১৪ দল ও জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। পলাতক আওয়ামী লীগ তাদের ঘাড়ে ভর করে পুনর্বাসনের স্বপ্ন দেখছে। বাংলাদেশের সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চা রক্ষায় এদের নিষিদ্ধ করা অপরিহার্য।
মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন বলেন, আবু সাঈদ, মুগ্ধ, খুবাইবসহ দুই হাজার প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বিপ্লব শুধুমাত্র একটি নির্বাচনের জন্য নয়। জুলাই সনদ অবিলম্বে বাস্তবায়ন না হলে হাসিনার রাজনীতি আবারও ফিরে আসবে।
তিনি বলেন, সরকার একটি বড় দলের স্বার্থে সবকিছু করার চেষ্টা করছে। অথচ দলের পরিচয়ে জুলাই শহিদরা রক্ত দেননি। তারা বাংলাদেশ পরিচয়ে অসীম ত্যাগ স্বীকার করেছেন।
আতাউল্লাহ আরও বলেন, কেউ কেউ ভারতীয় প্রেসক্রিপশনে রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন। হুঁশিয়ার করছি, এরকম করলে আপনাদের ঠিকানাও হাসিনার সঙ্গে হবে।
সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ঘোষিত পাঁচ দফা দলীয় সুবিধার চিন্তা থেকে প্রণীত নয়; এগুলো দেশ ও জাতির কল্যাণে। সরকারের প্রতি আমাদের জোর আহ্বান থাকবে অবিলম্বে এই সমস্ত দাবি বাস্তবায়ন করুন। যে দুই একটি দল এইসব দাবিতে একমত হতে পারছে না— তাদেরকেও দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দেশ ও জনগণের কল্যাণের রাজনীতি করার আহ্বান জানান তারা।
বক্তারা মহানগরবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আগামী কর্মসূচিগুলোতেও একইভাবে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতির অস্তিত্ব রক্ষার এই আন্দোলনকে বিজয়ের পথে এগিয়ে নিতে হবে।