নিউজ ডেস্ক:
ক্ষমতায় এলে ১৮ মাসের মধ্যে এক কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং শিক্ষিত বেকারদের জন্য এক বছরের ভাতা চালুর অঙ্গীকার নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
বিএনপি সূত্র জানায়, তরুণ ভোটারদের অগ্রাধিকার দিয়ে প্রচারণা চালাবে দলটি।
তবে দেশের সব জনগোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে বিএনপি তাদের প্রচারণায় খাদ্য সহায়তার জন্য ফ্যামিলি কার্ড, বীজ–সার ও অন্যান্য সহায়তার জন্য কৃষক কার্ড এবং চিকিৎসা কার্ড চালুর পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরবে বলে জানিয়েছে সূত্র।
নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা, সমান সুযোগ ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করার অঙ্গীকারও বিএনপির প্রচারণার অন্যতম প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হবে বলে তারা যোগ করেন।
সোমবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব আলোচনা হয়। শীর্ষ নেতারা দলের সম্ভাব্য প্রচারণা কৌশল নিয়ে এই বৈঠকে পর্যালোচনা করেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বৈঠকে যোগ দেন।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, কোন বার্তা ও প্রচারণা পদ্ধতি ভোটারদের বেশি আকৃষ্ট করবে সেটা বোঝার চেষ্টা করছে দল। এজন্য ভোটারদের আচরণ বিশ্লেষণ ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দিতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করেছে বিএনপি।
দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, তরুণ ভোটারদের লক্ষ্য করে দলের সম্ভাব্য স্লোগান হতে পারে ‘তারুণ্যের প্রথম ভোট ধানের শীষে পক্ষে হোক’।
সূত্র জানায়, সাতটি প্রধান ইস্যুকে কেন্দ্র করে ঘরে ঘরে গিয়ে সরাসরি ভোটারদের কাছে প্রতিশ্রুতি তুলে ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি।
দলীয় নেতারা জানান, খাতগুলো হলো—জলবায়ু ও পরিবেশ সুরক্ষা, শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, কৃষি, নারী ক্ষমতায়ন, ক্রীড়া ও ধর্মীয় বিষয়।
তারা আরও বলেন, নির্বাচনী প্রচারণার এই অঙ্গীকার তালিকা দলের ৩১ দফা সংস্কার পরিকল্পনার ভিত্তিতে করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কয়েকটি দল শিগগির মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ক্ষমতায় গেলে বাস্তবায়নযোগ্য বেশকিছু প্রতিশ্রুতি বিএনপির লিফলেটে তুলে ধরা হবে। এর মধ্যে রয়েছে পরিবেশ সুরক্ষা, ৫০ লাখ ফ্যামিলি কার্ড চালু, পাঁচ বছরে পাঁচ কোটি গাছ রোপণ এবং গুরুত্বপূর্ণ খাতে চাঁদাবাজি–দুর্নীতি দমনে বিশেষ উদ্যোগ।
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) মডেল অনুসরণ করে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ার পরিকল্পনাও প্রচারণায় তুলে ধরবে দলটি।
জলবায়ু ও পানি নিরাপত্তা ইস্যুতে ২০ হাজার কিলোমিটার নদী–খাল পুনরুদ্ধার, কমিউনিটি-ভিত্তিক সেচ ব্যবস্থা পুনরায় চালু এবং আধুনিক তিস্তা ও গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি থাকবে।
আর্থিক সংকটে থাকা ইমাম–মুয়াজ্জিনদের মাসিক ভাতা প্রদান এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উদ্বেগ নিরসনে বাড়তি উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।
ক্ষমতায় গেলে শিক্ষাখাতে বড় ধরনের সংস্কার আনা হবে। স্কুলপর্যায়ের পাঠ্যক্রমে ক্রীড়া, শিল্প–সংস্কৃতি ও প্রযুক্তিগত শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং শিক্ষার্থীদের ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপনে সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে।
ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে পূর্ণ উদ্যমে প্রচারণা শুরু হওয়ার প্রেক্ষাপটে মনোনয়ন–সংশ্লিষ্ট ক্ষোভ প্রশমনে কাজ করছে বিএনপি। দলীয় নেতারা জানান, টিকিট না পাওয়া নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে যাতে তারেক রহমান দেশে ফেরার আগেই পরিস্থিতি শান্ত হয়।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর তত্ত্বাবধানে মূলধারার গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও তৃণমূলে প্রচারণা জোরদারে সমন্বিত কৌশল গ্রহণ করেছে বিএনপি। সাত সদস্যবিশিষ্ট সাতটি দল গঠন করা হবে, প্রতিটির জন্য আলাদা নেতা থাকবেন।
দলীয় সূত্র জানায়, শীর্ষ নেতারা এখন নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় বেশি সময় দিচ্ছেন, দুর্বলতা চিহ্নিত করছেন এবং ভোটের আগে সেগুলো সমাধানে কাজ করছেন।
যেখানে দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্ব কম, সেখানে বিএনপির প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রস্তুতি এগিয়ে নিয়েছেন। তারা পোলিং এজেন্ট প্রশিক্ষণ, ব্যাকআপ এজেন্ট প্রস্তুত এবং ৩১ দফা প্রতিশ্রুতি ও রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা তুলে ধরে ব্যানার–ফেস্টুন–বিলবোর্ড টাঙাচ্ছেন।
বিভিন্ন পেশাজীবী গোষ্ঠীর সঙ্গে বৈঠক ও আলোচনা করছেন প্রার্থীরা। এসব আলোচনায় জায়গা করে নিচ্ছে স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার অঙ্গীকার।